রক্ত-জল আর জঙ্গল জীবনের গল্প - আড়কাঠি

আড়কাঠি !!! 
কোন বিশেষণে এর রিভিউ করবো বুঝতে পারছি না। এর উপযুক্ত রিভিউ করার শক্তিও বোধহয় নেই আমার। রিভিউ কখনো এক পাক্ষিক করা যায় না। দোষ- ত্রুটি থাকেই। কিন্তু এই উপন্যাসটা এতোটাই মোহ তৈরি করেছে যে দোষ খোঁজার চোখটাই বন্ধ ছিলো। 

ছবি ঃ আড়কাঠি ( বায়ান্ন প্রকাশনী )

ওবায়েদ হকের ইতোপূর্বে চারটা লেখা ( নীল পাহড়, কাঙালসঙ্ঘ, তেইল্যা চোরা, জল নেই পাথর ) পড়া হয়েছে। তার প্রতিটা লেখার ধরন ছিলো- খুব সাধারণ গল্পের প্লট কে অসাধারণ করে তোলা। কিন্তু এই উপন্যাসটা শুরু থেকেই অসাধারণ। তার লেখার যে ধারাবাহিকতার সাথে আমি পরিচিত তার সমস্ত ঢল ভেঙে দিয়েছে- 'আড়কাঠি'। তার গল্পের প্লটগুলো সাধারণ হলেও সেখানে বেশ গাম্ভীর্য থাকে। তবে  প্রথমবারের মতো লেখায় গাম্ভীর্যের ভেতরেও দারুণ ছন্দপতন দেখেছি। কি নেই তাতে- সংসার, স্বপ্ন, বিভোর, ক্রোধ, শিথিলতা, যুদ্ধ। মনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ! 

মূল গল্পে, উপমহাদেশের খুবই সাধারণ এক গ্রামে প্রথমবারের মতো ট্রেন লাইন আসা নিয়ে গল্পের সূচনা হলেও গল্পের প্লট সেই নিরীহ সবুজ গ্রাম থেকে নরেন নামক এক স্বমোহনা যুবকের পিঠে চরে বেড়িয়ে পড়ে লাল ইট আর বাবুদের শহর কলকাতার বুকে। যার যাওয়ার কোন জায়গা নেই, তার পুরো পৃথিবীটাই ঘর। সেই সূত্র মেনে, নরেন পরিচিত হয় দীনেশ নামক সংসার ছায়ায় আবদ্ধ ভাগ্যান্বেষী হতভাগার সাথে। 
গল্পের প্রধান সূত্রাপাত মূলত এখানেই। কাজের সন্ধানে তারা দ্বারস্ত হয়- আড়কাঠি সর্দার অঘোরবাবুর সাথে। যার সাথে তারা বেড়িয়ে পড়ে জঙ্গল এর পাহাড় ঘেরা অভুক্ত জনপদের উদ্দেশ্যে। পরিকল্পনা, মানুষ শিকার। বাবুদের চা বাগানের বেনামী জীবনদারী আমৃত্যু শ্রমিক হিসাবে। 
নানাবিধ ঘন ঝোপ এর শাপদের বিস্তীর্ণ মাঠ পেরিয়ে- অভুক্ত এর কাঙ্গালসার জনপদের মানুষদের নির্মল জল আর আহারের স্বপ্নে বিভোড় করে চলে তাদের মানুষ শিকার। এরপরই ঘটনা মোর নিতে থাকে- একে একে মানুষ খুন আর হারিয়ে যাওয়াদের সংখ্যায় যোগ হয় দীনেশের নাম। ইহজীবনের পরম বন্ধু দীনেশকে হারিয়ে গল্পের মোড় ঘুরে যায়। এরপর একে একে গল্পে যুক্ত হয়- গুলচি, ফকির ছাহিব এবং মির্জা সাহেব ও সুরেন্দ্রর ঘটনা প্রবাহ। কোন প্রকার ভবিষ্যত জ্ঞান না থাকা শিকারী নরেন এসময় হয়ে উঠে শিকার ছিনতাইকারী। যার এখন প্রধান লক্ষ্য খাঁচার মোহ ভেঙে পাখি ছেড়ে দেয়া। 

গল্পটা অতিমাত্রায় মোহনীয়। খুব সাধাসিধে বিশ্লেষণ। কিন্তু দারুণ মাত্রায় ছান্দিক। বলা যায়, আজ আমি এক তরফা ভাবে এর রেটিং দিলে সর্বোচ্চ রেটিং দিব। সাধু সাধু। 

মন্তব্যসমূহ

_________________________________________________

এখানে প্রকাশিত সমস্ত লেখা 'রেদোয়ান আহমেদ' কর্তৃক সংগৃহীত। © ২০২১-২০২৫