নারায়ণগঞ্জ টু শেওড়াপাড়া

মোটামুটি বলা যায় নারায়ণগঞ্জ টু মিরপুর-১০ এই রুটে আমার দীর্ঘ প্রায় ২ বছরের চলাচলের আজকে ইতি ঘটলো। এরপর তেমন কোন কাজ না পড়লে এই রুটে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না।

ভার্সিটির ক্যাম্পাস শিফটিং হচ্ছে। পুরানা ভবন বা এরিয়াটা মিস করার মতো তেমন কোন কারণ নেই। নতুন এরিয়ায় আশা করি আমরা ভালো ভাবেই ম্যাচ করবো। মিস করার মতো যদি কিছু থাকে তাহলে একটাই জিনিস আর সেটা হচ্ছে এই সুদীর্ঘ নারায়ণগঞ্জ-গুলিস্তান-শাহবাগ-কাওরানবাজার-তেজগাঁও-বিজয় স্মরণী-আগারগাও-শেওড়াপাড়া রুট।
এই পয়েন্ট গুলোর ক্রসিং, ট্রাফিক সিগন্যাল, কাঙ্ক্ষিত কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত জ্যাম গুলো চলমান সময়ে তুমুল বিরক্তিকর হলেও দীর্ঘদিনের অভ্যাসের কারণে আজকে মনে হচ্ছে সত্যিই ঢাকার রাস্তায় এইটুক জ্যামময় জীবনকে আসলেই অনেকটা মিস করবো।

দিন দিন বড় হচ্ছি। প্রতিটা দিন কত নতুন জিনিস শিখছি বলে আমরা ভাবি। কিন্তু শেখার চেয়ে হারানোর সংখ্যাই আমার কাছে বেশি মনে হয়। এই রুটে নিত্য চলাচলকারী যে কেউ আমার এই বিবৃতির পর আমাকে গালমন্দ করতে চাইবেন। স্বাভাবিকই তো জ্যাম আবার কার সহ্য হয়? তাও নিত্য ঘন্টার পর ঘন্টা!!! শেওড়াপাড়া থেকে ফেরার সময় মোটামুটি ৭/৮ টা সিগন্যাল পরে। রোড ক্লিয়ার থাকলেও প্রতি সিগন্যাল কম করে হলেও ১০ মিনিট। মাঝে মাঝে তো শুধুমাত্র মৎস্যভবন অথবা পল্টনের সিগন্যাল ৩০/৪০ মিনিট উধাও করে দিত। ব্যস্ত জনজীবনে থেকে এই যানজট কেউ খুব আনন্দ মনে উপভোগ করেছে বলে আমার বিশ্বাস হয় না। কিন্তু যেহেতু আমার এই রুটে চলাচলে ভাটা পড়লো এবং আজকে যখন শেষ বিকেলে ফিরছি তখন মাথায় এইসব উদ্ভট চিন্তা ধারা উঁকি দিচ্ছিলো। আজকে বোধহয় আমি আরো নিজ থেকে চাইছিলাম আরেকটু জ্যাম থাকুক, আরো কিছুক্ষণ থাকি নাহ, মহানগরের এই ব্যস্ততম স্থীবরতায়।

পুনশ্চঃ এতো কথা বলার কোন অর্থ হয় না। শুধু শুধুই আপনাদের বিরক্ত করা। কিন্তু এও তো জীবনের একটা পাঠ। এতো দীর্ঘতম সড়ক পথে এতো দীর্ঘ যাত্রায় কতটুকু পাওয়া, কতটুকুই বা ছেড়ে আসা...

পুনশ্চঃ-২: সরি, ভুলে গিয়েছিলাম। ভার্সিটি এরিয়ায় মিস করার মতো ২ টা জিনিস আছে।

১. গ্রীণ ক্যাফে
ভার্সিটি জীবনের শুরু থেকে সার্কেলের বহু কাঙ্ক্ষিত-অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত কিংবা সূচনা ও সমাপ্তি এখানেই।

২. হোটেল ছালাদিয়া
শামীম স্বরণীর একদম শেষ মাথার হাতের ডানে কালো কাচাপাঁকা দাঁড়িওয়ালা এক মুরব্বির হোটেলই আমাদের হোটেল ছালাদিয়া। মাঝে সাজে টাকার গরম না থাকলে দৈনিক দুপুরের আমাদের খাওয়ার হোটেল এটাই। হোটেলের সাটার মরিচা ধরা। নিজস্ব কোন নাম নেই। তাই আমাদের প্রদত্ত নামেই আমরা ডাকতাম।
খাবারের মানের অতি তীব্রতা কিংবা কালেভদ্রে প্লেটে দু একটা আধ পাকা চুল পাওয়া যাওয়া এসব কিছুই এই হোটেল মনে রাখার কারণ নয়। মনে রাখার কারণ আমিও খুঁজে পাচ্ছি না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এই হোটেলটাকেও আমি মিস করবো।

রাত অনেক হয়েছে। এইসব আলাপচারিতা আর না।
আজকের দিনটি সুন্দর ছিলো। আগামী সুন্দর হোক। আমরা আগামী উদ্দেশ্যে হাটি নতুন কিছু হারানোর জন্যই।

 
বৃহস্পতিবার,
২০ জুলাই, ২০২৩
রেদোয়ান আহমেদ।

মন্তব্যসমূহ

_________________________________________________

এখানে প্রকাশিত সমস্ত লেখা 'রেদোয়ান আহমেদ' কর্তৃক সংগৃহীত। © ২০২১-২০২৫