ভাগীদার অথবা এপিটাফ
সুখের ভাগীদার সবাই হয়/হতে চায়। দুঃখের ভাগীদার কেউ না। আপনি সুখী, প্রোডাক্টিভ, অতিরঞ্জিত, অতুলনীয়, অবিষ্মরণীয় হইলে সবাই আপনাকে নিয়ে গল্প করবে, যে যার মতো ক্রেডিট নিবে। আপনার পরিচয়ে, আপনার আলোয় নিজেদেরও কিছুটা রাঙিয়ে নিতে চাইবে।
প্রতিটা মানুষ জন্মানোর পর একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়। যেদিন এই সম্ভাবনা ক্ষীণ, ধূসর কিংবা শেষ হয়ে যাবে। যেদিন থেকে অতি সাধারণ কিংবা ক্ষুদ্রাতিও আলাদা করে আইডেন্টিফাই করার মতো আপনার কিছু থাকবে না সেদিন থেকে আপনি হারিয়ে যেতে থাকবেন। পৃথিবীও আপনাকে মনে রাখবে না যে, একদিন আপনি জন্মেছিলেন।
চারদিকে এই ধারাই স্পষ্ট। এটা কারো দোষ না। কারো প্রতি অবহেলাও না। নিজেদের একান্ত দুঃখ দুর্দশা মানুষ এক জনমে কাটিয়ে উঠতে পারে না। সেখানে অন্যের বিষয় ভাবার সময় কই? এরচেয়ে বরং অন্যের সুখের বিষয়, অন্যের চন্দ্রজয় সাফল্যের কিছুটা, তার পাশাপাশি থেকে কিংবা সামান্য কিছুটা গুণগান করে যদি সামান্য সুখ অনুভব করা যায় তাতে ক্ষতি কি? তাই আমরা সবসময় সুখীর পাশাপাশি। এটাই নিয়ম, এটাই রুলস। এটাই সৃষ্টির টার্মস এন্ড কন্ডিশন।
নেপোলিয়ন খুব ভালো ভাবেই বিষয়টা অনুধাবন করেছিলেন। তার মতে- ' পৃথিবীর ইতিহাস জয়ীদের বিজয়গাঁথা ছাড়া আর কিছুই না'। আপনি জয়ী, আপনি রবেন। আপনি হারলেন তো হারিয়ে যাবেন। তাই আমরা হাজার দুর্দশার মাঝে সুখ ছড়িয়ে/দেখিয়ে বেড়াই। আমাদের কথাবার্তা, চালচলন, সকলের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ, সোশ্যাল মিডিয়া টাইম লাইন জুড়ে আমাদের সুখের বহর, সুখের সব গল্পকথা, আলোকচিত্র। কারণ আমরা হারিয়ে যেতে চাই না। এই সুখ-দুঃখ, ভালো-খারাপ, জয়-পরাজয়, আসল-অভিনয় এমন রূপভেদের মাঝে একটা সময় ঠিক সত্য সামনে ফুটে উঠে। আয়নার মত। বয়স বাড়ে। নতুন সুখী মানুষের পেছনে সময় ছোটে। পরাজিতরা হারিয়ে যায়। শেষ চিহ্ন হিসাবে তাদের কবরে একটা এপিটাফও উঠে না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার গাঠনিক মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।