কেমন ছিলো সেদিনের সেই 'খোঁড়া শালিক'।
| ধান শালিক ( প্রতিকী ছবি ) |
প্রতিটা কবিতা সৃষ্টির পেছনে কিছু গল্প থাকে। প্রতিটা কবিতাই উঠে আসে কিছু ঘটনা প্রবাহ থেকে। আমার অতি পছন্দের 'খোঁড়া শালিক' কবিতাটির পেছনেও কিছু গল্প আছে। সেই গল্পই আজ বলার চেষ্টা করবো। তবে এই গল্প বলার কোন ইচ্ছে ইতপূর্বে আমার ছিলো না। আজ হঠাৎ মনে হলো গল্পটা লিখে রাখা যায়। কবিতার মতোই এই লেখাটাও এক ঘোরগ্রস্থ ভাবনা।
সাবদির শীতকালনী পরিবেশ শহুরে মানুষের কাছে যেনো এক টুকরো শীতল গ্রাম। যদিও সাবদি গ্রামে দেখার মতো তেমন কিছুই নেই। তবে নারায়ণগঞ্জের মতো এমন শিল্প নগরীর মানুষের কাছে সাবদি স্বর্গ সমতুল্য। তাই নারায়ণগঞ্জবাসীদের এমন সাবদির প্রতি বিশেষ আগ্রহ সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে অন্যান্য জেলা বা দূরদুরান্তের মানুষের এক বিশেষ আগ্রহ হয়ে উঠেছে। যার ধারাবাহিকতায় ঢাকা থেকে আগত বন্ধু জুগলকে সাবদি ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার বিশেষ দায়িত্ব আমার উপরই পড়ে।
তবে দেখলাম পুরো সর্ষে ক্ষেতের আল ধরে অনেক কপোত-কপোতি তাদের উচ্ছ্বাসিত সময় পার করছে। অসম বয়সের জুগল দেখেনি সেদিন। সবারই গড় বয়স কুড়ি থেকে পঁচিশের মধ্যে। সেদিন মনে হয়েছিলো পৃথিবীর প্রথম প্রেম বোধহয় এমনি ছিলো।
কিছু সময়ের জন্য মনে হয়েছিলো আমি একাই বোধহয় জুগলহীন। নাহ, তবে কিছু সময় পরেই মনে হলো খুচরো বাদাম বিক্রেতা, কিছু ভাসমান দোকানি ও কয়েকজন ব্যাটারিচালিত রিকশাওয়ালাও ছিলো। তবে জায়গাটা আমার বেশ ভালো লাগছিলো। সকালের ঠান্ডা মিষ্টি হাওয়া। ঘাসের উপর আধা শুকনো রপালী শিশির। টিনের দেয়াল বেয়ে চলা কিছু কালো পিঁপড়ে, ছাউনির বাইরে কিছু শালিকের কিচিরমিচির বেশ সুন্দর এক পরিবেশ তৈরি করেছে।
বেশ কিছুক্ষণ এক জায়গা বসে থাকার পর আমি একটু ঘরের দরজার সামনের গিয়ে বসলাম। কাঁচা রোদ গায়ে মাখার বেশ ইচ্ছে হলো। আমি ঘরের দুয়ারের উপর পড়া রোদের দিকে এক নজরে চেয়ে আছি। বাঁশের সিঁড়ি করা হয়েছে।
কিছু বাদেই খেয়াল করলাম, একটা জুটি ভাঙা শালিক খোঁড়াতে খোঁড়াতে আমার ঠিক সামনে পিঁপড়া বা কোন মেটো পোকা ঠুকরে খাচ্ছে। ধান শালিক। বেশ কিছুক্ষণ শালিকটার কার্যকলাপ দেখছি। খুব ভালো ভাবে খেয়াল করে দেখলাম শালিকটার বাঁ পা ভেঙে গেছে। পায়ের হাড় থেকে আঙ্গুলগুলো ভেঙে গেলেও চামড়ায় আটকে ভাঙা অংশটি দেহের সাথে ঝুলছে। শালিকটি লাফিয়ে লাফিয়ে চলছে। সে যত লাফাচ্ছে ততই ভাঙা অংশটি ঝুলছে। মনে হচ্ছিলো ভাঙা অংশটি ঝরে গেলেই তার স্বস্তি হয়। নির্বিকার ভঙ্গিতে সে আমার ঠিক চার পাঁচ হাত দূরে দেদারসে পিঁপড়ে খেয়ে যাচ্ছে।
কয়েকবার শালিকটার সাথে চোখাচোখি হলো। খুব মনযোগ দিয়ে শালিকটার মনের অবস্থা বুঝতে চাইলাম। সে কি কিছু বলতে চায় আমাকে? না-কি মানুষের উদ্দ্যেশে তার কিছুই বলার নেই? নাহ সেদিন শালিকের সাথে আমার কোন কথাই হয় নি। তবে তার নিরব চাহনি আমাকে একটা ভাবনা দিয়ে গেল। শালিকটি চলে যাওয়ার পরও তাকে নিয়ে আমি এক ঘোরের মধ্যে ছিলাম। সে ঘোরগ্রস্ত সময়েই ফোনের নোটপ্যাডে টাইপ হচ্ছিলো 'খোঁড়া শালিক'।
সাবদি পৌঁছানোর পর বিশাল এক চালা ঘরে বসার জায়গা পেলাম। ঘরটি বোধহয় কোন খাবার ঘর হিসেবে তৈরি করা হবে। তখনো সম্পূর্ণ ঘরটি তৈরি হয়নি। উপরের চালা দেওয়া এবং চারদিক কোনরকম বেষ্টনী দেওয়ার হয়েছে কেবল। জানালা ও দরজার বলতে কাটা টিন ছাড়া আর কিছুই নেই। অর্ধপ্রতিষ্ঠিত ঘরটিকে কিছু সময়ের জন্য ছাউনি মনে হয়। আমি কপাট বিহীন সেই আজব জানালা গুলোর একটির পাশে বসলাম। কাটা টিনের জানালা দিয়ে যতদূর চোখ যায় ততদূর হলুদ সর্ষেফুল। বোধহয় এই অঞ্চলের মানুষ শীতকালীন ফসল বলতে শুধু সর্ষে চাষ করাই বোঝে। একরের পর একর শুধুই সর্ষে ক্ষেত।
পত্রিকা অফিসের বন্ধুকে তার মতো সময় উপভোগ করতে দিলাম। সেদিনই জেনেছিলাম, পত্রিকা অফিসের ছেলেরা বেশ রোমান্টিক হয়। সাবদি পৌঁছানোর পর প্রিয়তমার পাশে ঘেষা ছাড়া আর কিছুই করেনি ছেলেটি। কাজের মধ্যে দুই মুঠেফোনে ছবি তুলে দেওয়া আর নানাবিধ প্রশ্ন করা।
পত্রিকা অফিসের বন্ধুকে তার মতো সময় উপভোগ করতে দিলাম। সেদিনই জেনেছিলাম, পত্রিকা অফিসের ছেলেরা বেশ রোমান্টিক হয়। সাবদি পৌঁছানোর পর প্রিয়তমার পাশে ঘেষা ছাড়া আর কিছুই করেনি ছেলেটি। কাজের মধ্যে দুই মুঠেফোনে ছবি তুলে দেওয়া আর নানাবিধ প্রশ্ন করা।
তবে দেখলাম পুরো সর্ষে ক্ষেতের আল ধরে অনেক কপোত-কপোতি তাদের উচ্ছ্বাসিত সময় পার করছে। অসম বয়সের জুগল দেখেনি সেদিন। সবারই গড় বয়স কুড়ি থেকে পঁচিশের মধ্যে। সেদিন মনে হয়েছিলো পৃথিবীর প্রথম প্রেম বোধহয় এমনি ছিলো।
কিছু সময়ের জন্য মনে হয়েছিলো আমি একাই বোধহয় জুগলহীন। নাহ, তবে কিছু সময় পরেই মনে হলো খুচরো বাদাম বিক্রেতা, কিছু ভাসমান দোকানি ও কয়েকজন ব্যাটারিচালিত রিকশাওয়ালাও ছিলো। তবে জায়গাটা আমার বেশ ভালো লাগছিলো। সকালের ঠান্ডা মিষ্টি হাওয়া। ঘাসের উপর আধা শুকনো রপালী শিশির। টিনের দেয়াল বেয়ে চলা কিছু কালো পিঁপড়ে, ছাউনির বাইরে কিছু শালিকের কিচিরমিচির বেশ সুন্দর এক পরিবেশ তৈরি করেছে।
বেশ কিছুক্ষণ এক জায়গা বসে থাকার পর আমি একটু ঘরের দরজার সামনের গিয়ে বসলাম। কাঁচা রোদ গায়ে মাখার বেশ ইচ্ছে হলো। আমি ঘরের দুয়ারের উপর পড়া রোদের দিকে এক নজরে চেয়ে আছি। বাঁশের সিঁড়ি করা হয়েছে।
কিছু বাদেই খেয়াল করলাম, একটা জুটি ভাঙা শালিক খোঁড়াতে খোঁড়াতে আমার ঠিক সামনে পিঁপড়া বা কোন মেটো পোকা ঠুকরে খাচ্ছে। ধান শালিক। বেশ কিছুক্ষণ শালিকটার কার্যকলাপ দেখছি। খুব ভালো ভাবে খেয়াল করে দেখলাম শালিকটার বাঁ পা ভেঙে গেছে। পায়ের হাড় থেকে আঙ্গুলগুলো ভেঙে গেলেও চামড়ায় আটকে ভাঙা অংশটি দেহের সাথে ঝুলছে। শালিকটি লাফিয়ে লাফিয়ে চলছে। সে যত লাফাচ্ছে ততই ভাঙা অংশটি ঝুলছে। মনে হচ্ছিলো ভাঙা অংশটি ঝরে গেলেই তার স্বস্তি হয়। নির্বিকার ভঙ্গিতে সে আমার ঠিক চার পাঁচ হাত দূরে দেদারসে পিঁপড়ে খেয়ে যাচ্ছে।
কয়েকবার শালিকটার সাথে চোখাচোখি হলো। খুব মনযোগ দিয়ে শালিকটার মনের অবস্থা বুঝতে চাইলাম। সে কি কিছু বলতে চায় আমাকে? না-কি মানুষের উদ্দ্যেশে তার কিছুই বলার নেই? নাহ সেদিন শালিকের সাথে আমার কোন কথাই হয় নি। তবে তার নিরব চাহনি আমাকে একটা ভাবনা দিয়ে গেল। শালিকটি চলে যাওয়ার পরও তাকে নিয়ে আমি এক ঘোরের মধ্যে ছিলাম। সে ঘোরগ্রস্ত সময়েই ফোনের নোটপ্যাডে টাইপ হচ্ছিলো 'খোঁড়া শালিক'।
কিছু কিছু কবিতা লেখার পর আমার কাছে তা খুবই প্রিয় হয়ে ওঠে। সেসব কবিতার মাঝে খোঁড়া শালিক একটি। মাঝেই মাঝেই খুব মন দিয়ে পড়ি কবিতাটি। ষোড়শী প্রেমিকার মতো কিভাবে সে এতো প্রিয় হয়ে উঠলো আজও তা জানি না।
খোঁড়া শালিকরেদোয়ান আহমেদ
বাঁ পায়ের অর্ধেকটা ঝুলে গেছে তোমার,
মাটির সাথে ঘর্ষণে ক্ষয়ে গেছে নখ-
এক পায়ে দাঁড়িয়ে টালমাটাল এগিয়ে চলা
হায়, কি বিষাক্ত জীবন!
হয়তো দুরন্ত বালকের ফাঁদে পা জড়িয়ে ছিলে
কিংবা মুখোমুখি হয়েছিলে নিষ্ঠুর কারো !
ছাতার শিকে বাধা নাইলন সুতোর টানে কিংবা
সরু কঞ্চি দিয়ে মেরেছিলো বোধহয়?
মহাকালের কি অপরাধে-
সেদিন তোমার পা ভেঙেছিল?
হায়, শালিক; খোঁড়া শালিক!
তোমার সাথে আমার তফাৎ কি জানো?
আমি জীবনের মাঝে প্রাণ খুঁজি,
তুমি মানুষের মাঝে মানুষ!
২৯ পৌষ ১৪২৭ | ১৩ জানুয়ারি ২১ | বুধবার
সাবদি,বন্দর।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার গাঠনিক মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।