শেখ মুজিব নিজেই একটা দেশ!
ক.
স্বাধীনতার পর পরই কলকাতা থেকে সুভাষ মুখোপাধ্যায় ঢাকায় এসেছিলেন শেখ মুজিবরের সাথে দেখা করতে। গেট দিয়ে সোজা চলে গেলেন বসবার ঘরে। শেখ মুজিবকে সুভাষ বলেন- এ কেমন ব্যবস্থা? প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে আসলাম কোনো কোনো সিকিউরিটি নাই। আমার ব্যাগও চেক করলো না কেউ। ওতে পিস্তলও তো থাকতে পারত!
শেখ মুজিব হো হো করে হাসলেন- কি যে বলেন, আমার দেশের মানুষ আমাকে মারবে না।
পান বিক্রেতার ছদ্মবেশে ভারতীয় RAW এজেন্ট কাও এসেছেন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে।
তাকে দেখেই শেখ মুজিব বিরক্ত গলায় বললেন, আপনাকে আমি চিনি। আপনাকে ছদ্মবেশ ধরার প্রয়োজন পড়লো কেন?
কাও বললেন, মাঝে মাঝে নিজেকে অন্যরকম ভাবতে ভালো লাগে। আপনাকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। মেজর রশিদ, ফারুক, লে. কর্ণেল ওসমানী এই নিয়ে আলোচনায় বসেছেন জেনারেল জিয়াউর রহমানের বাসায়। এই বিষয়ে আপনাকে তথ্য দিতে এসেছি।
আপনারা অতি সন্দেহ প্রবণ। পান বিক্রেতার ছদ্মবেশে যে আমার কাছে তথ্য দিতে আসে তার কথা আমি বিশ্বাস করি না।
আপনার সামনে মহাবিপদ।
পাকিস্তানের কারাগারে যখন ছিলাম। তখন বিপদ আমার ঘাড়ে বসে ছিল। এখন বিপদ পার করে এসেছি।
বিপদ আপনার ঘাড় থেকে নামেনি স্যার।
যাদের কথা আপনি বলছেন তারা আমার সন্তানসম। আমি এই আলোচনা আর চালাবো না। আমার শরীরটা ভালো নেই। যদি কিছু মনে না করেন আমি ঘুমোতে যাব।
স্যার আপনি ভুল করছেন।
ভুল আপনারা করছেন। শেখ মুজিব উঠে দাঁড়ালেন।
খ.
মেজর ফারুক ও মেজর রশিদ ক্যান্টনমেন্টে জানালো ১৪ আগস্ট ফার্স্ট বেঙ্গল ল্যান্সার ও দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারি একটি যুক্ত মহড়া করবে। অন্ধকারে অস্ত্র বেছে নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করার ট্রেনিং।
আরব-ইসরাইল যুদ্ধে আরবদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধুর পাঠানো উপহারের প্রতিদানে তৎকালীন মিসরের প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবকে ৩০ টি T-54 ট্যাঙ্ক পাঠিয়েছিলেন। সেই ট্যাঙ্ক গুলো নিয়েই রানওয়েতে প্রস্তুতি চলছে এক কলঙ্কিত মহড়ার।
মেজর ফারুক, রশিদ, ডালিম, পাশা, হুদা, শাহরিয়ার, নূর, মহিউদ্দিন সবাই কালো পোশাকে তৈরি হতে থাকেন। কয়েকশত সৈন্য সমেত রানওয়েতে সবাই প্রস্তুত হতে থাকে। মূল পরিকল্পনাকারী অফিসার ব্যতিত কেউ জানে না একটু পরেই কি ঘটতে যাচ্ছে।
অপারেশনের মূল টার্গেট ঢাকার তিনটি বাড়ি।
প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দে বাড়ির ভেতরে ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায়। কয়েকবার চেষ্টার পর শেখ মুজিব টেলিফোন করেন সেনাপ্রধান শফিউল্লাহ ও তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্ণেল জামিলকে। কিন্তু সেনাপ্রধান তৎক্ষণাৎ কোন পদক্ষেপ নিতে পারেননি।
নিচতলায় ঘাতকদল শেখ কামালকে হত্যা করে। শেখ মুজিব ছুটে আসতে চাইলে তাকে ঘিরে ধরা হয়।
শেখ মুজিবের চোখের দিকে চেয়ে বিব্রত ভঙ্গিতে মেজর মহিউদ্দিন বললো- স্যার একটু আসুন।
কোথায় আসব?
স্যার একটু আসুন...
তোরা কি চাস? পাকিস্তানি আর্মি আমার কিছু করতে পারে নাই, তোরা কি করবি? মুজিব হুঙ্কার দিলেন।
স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে ছুটে আসলেন মেজর নূর। শেখ মুজিবের দিকে তাকানোর আগেই সে ব্রাশফায়ার করলো। বঙ্গপিতা সিঁড়িতে লুটিয়ে পড়লেন। সময় ভোর পাঁচটা চল্লিশ।
৩২ নম্বরের আশে পাশে টহলরত সৈন্যদের ট্যাঙ্ক, ট্রাক, লরী ছাড়াও একটি জীপকে দেখা গেলো আমেরিকার ফ্লাগ উড়িয়ে টহল দিতে।
‘খবর পেয়ে বিগ্রেডিয়ার শাফায়াত ভোর বেলাই রওনা দেন তৎকালীন উপ সেনাপ্রধানের বাসায়। উত্তেজিত হয়ে দরজা নক করেন তিনি। উদ্বিগ্ন কন্ঠে শাফায়াত বলেন- President is killed.
উপ সেনাপ্রধান বিচলিত হলেন না। শান্ত গলায় বললেন- President is dead so what? Vice President is there. Get your troops ready. Uphold the constitution.’
মুজিবের লাশ যখন কোন রকমে দাফন সম্পূর্ণ করা হলো তখন বিশ্বনেতাদের হাহাকার উড়ে আসছে দেশের বুকে-
১. শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে — ফিদেল কাস্ট্রো।
২. তোমরা আমারই দেওয়া ট্যাঙ্ক দিয়ে আমার বন্ধু মুজিবকে হত্যা করেছ! আমি নিজেই নিজেকে অভিশাপ দিচ্ছি- মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত।
৩. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম শহীদ। তিনি অমর– সাদ্দাম হোসেন।
৪. যিশু মারা গেছেন। এখন লাখ লাখ লোক ক্রস ধারণ করে তাকে স্মরণ করছে। একদিন মুজিবই হবেন যিশুর মতো- আকাশ বানী, কলকাতা।
৫. মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না, যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোনও জঘন্য কাজ করতে পারে-নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট।
তথ্যসূত্র :
ক্রাচের কর্ণেল - শাহাদুজ্জামান ( পৃষ্ঠা: ২২৮, ২৩১-২৩২, ২৩৪ )
দেয়াল - হুমায়ূন আহমেদ ( পৃষ্ঠা: ৬৩-৬৪, ১০১-১০২ ) এবং বাংলা ট্রিবিউন
মর্মান্তিক ইতিহাস জানতে পারলাম।
উত্তরমুছুননোবেল বিজয়ী উইলিবান্টের কথাটা খুব নেক্কার জনক হলেও সত্য।
উত্তরমুছুন