রাতের সংজ্ঞা বিষাদ না-কি নিঃসঙ্গতা?
রাতের সংজ্ঞা কি? বিষাদ না-কি নিঃসঙ্গতা? না-কি পুরোনি স্মৃতিচারণের আদর্শ সময়? না-কি উপভোগের?
সে যাই হোক, তবে রাতের অন্ধকার মানে যে নিজের সাথে নিজের একটা হিসেব নিকেশের সময় তা নিশ্চিত। নিজের পাওনাগুলো উপলব্ধি করা যায় এসময়। উপলব্ধি করা যায় নিজের অপূর্ণতা গুলো। যার জীবন যত বড় তার জীবনে পূর্ণতা-অপূর্ণতার সংখ্যাও বেশি। কিন্তু দীর্ঘ জীবনধারীর একটা সুবিধা হলো পূর্ণতা-অপূর্ণতার সংখ্যাকে ভাগ করে নিজে নিজেই একটা আত্মতুষ্টি পেতে পারেন। তবে সেই বয়সটি আমাদের হয়নি। সুকান্তের মতো আঠারো বছর বয়স বড় দুঃসহ হলেও এই বয়সটাকেই দুর্বল করে দেয় প্রিয় জিনিসগুলোর অপূর্ণতাকে!
আমাদের পূর্ণতা থাকে শিক্ষায়, বড়দের স্নেহে, সহজলভ্য জিনিসে। কিন্তু কৈশর পেরিয়ে যৌবনে পা দিয়ে প্রথমেই বেশির ভাগ মানুষের যে ধাক্কা সহ্য করতে হয়, তা বোধহয় প্রেম! যৌবনের প্রথম প্রেম। যদি বলি বয়ঃসন্ধির প্রেম তাহলে বোধহয় এই প্রেমটার গাম্ভীর্য কমে যায়। একটা ছেলে কিংবা একটা মেয়ে জীবনের প্রথম একটা প্রেমে পড়ে! সেটা অবশ্যই তার কাছে অনেক মূল্যবান। হয়তো এসময়েই তারা সঠিক মানুষ বেছে নেয় হয়তো বা কেউ বেছে নেয় ভুল মানুষকে । কিন্তু ওই সঠিক কিংবা ভুল মানুষটাই তার আবেগ ও ভালোবাসার বিশাল অংশ জুড়ে থাকে।
তবে কিছুদিন যেতেই অনেকেই এই জিনিসগুলো উপলব্ধি করে। আবার অনেকে হয়তো নিজের বিবেককে অচল করে ফেলে। কিন্তু ঠিক একসময় সব ভুল ভালোবাসা,আবেগ ঝড়ো বাতাসে উড়ে যাওয়া ধূলিকণার মতো উড়ে যায়। তবে ঠিকই চিহ্ন ফেলে যায় সে ঝড়ের। কোন ভাবেই যেনো তাদের মুছে ফেলা যায় না! অবশ্য ভূল ভালোবাসা বলে কিছু নেই, তবে সেটা হচ্ছে ভূল মানুষের প্রতি ভালোবাসা।
রাত যেনো তারুণ্যের একটা অপ্রিয় সময়ের নাম। প্রতিটা রাতে কেনই বা এতো শূন্যতা বিরাজ করে চারপাশে? নিজের সম্পর্কে কিছু বলার নেই। তবে নিজের বলেও তো কিছু কথা থাকে। কিছু দাগ তো আমারও আছে! সে দাগ বয়ে বেড়াচ্ছি আজও! কতদিনে এভাবে চলবে তারও ঠিক নেই। বরাবরের মতো আমি সেই প্রিয় মানুষটাকে আর ভাবতে চাই না। নিজেকে সম্পূর্ণ দূরে রাখতে চাই তার থেকে। কিন্তু কি করে তা সম্ভব? মানুষ চাইলেও যে অনেক কিছু পারে না! আজও কোননা কোন ভাবে সে আমার সামনে চলে আসে! কখনো স্বপ্ন হয়ে, কখনো কল্পনায়, কখনো বা সামনাসামনি কিংবা ছবিতে। তাকে দেখা না দেখার এক বিস্তর ফারাকের মাঝে আমি পরে আছি কতকাল ধরে! সে আমার হলে বোধহয় বড্ড মুশকিল হতো আমার, তাকে ঠিক মতো আগলে রাখতে পারছি কিনা ভেবে। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে সে আমার হয়নি। তারও তো পছন্দ-অপছন্দ আছে, মন আছে, তারও তো অন্য কাউকে ভালো লাগতে পারে! তাই সে আমার হয়নি। প্রকৃতির নিয়মের বাইরে কে’ই বা যেতে পারে?
আজ ফেসবুক স্ক্রলিং করতে করতেই অন্য একটা মানুষের করা ভিডিওতে তাকে দেখলাম। কি সুন্দর সাবলিল আজও! সেই আগের মতোই আছে সে। তার এই প্রানবন্ত মুখটাই তো দেখতে চেয়েছিলাম চিরকাল। হয়তো আপন হিসবে, হয়তো বা দূরের কেউ হিসেবে! প্রকৃতি আমার দ্বিতীয় কথাটাই শুনেছে, সে এক দূরে মানুষ। তাকে ভালোবাসা যায়, অনুভব করা যায় কিন্তু তাকে ছোঁয়া যায় না।
ওয়ারফেজ এর পুর্ণতা, তোমাকে, যতদূর এই তিনটা গান হচ্ছে আমার সবচেয়ে খারাপ সময়ের সাক্ষী। কত শতবার এরা আমার সঙ্গী হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকে ভুলিয়ে রেখেছে। তবুও বারংবার কোননা কোন ভাবে তাকে মনে পড়বেই। আর তারপর নিজের অবস্থান ভুলে যেতে ইচ্ছে হয়, দিগবিদিগ ভূলে আমি যেনো বারবার তাকেই চাই! তাকে পাওয়ার এই লোভ কি আমার কখনোই শেষ হবে না? আরো কত রাত পেরুলি নতুন সূর্যের সাথে সাথে আমি তাকে ভূলে যাব? তাকে ভোলা কি এতোই সহজ?
মানব জনমের এক বড় অপূর্ণতা- ভালোবাসা পরিপূর্ণ প্রকাশ ভাবে প্রকাশ করা যায় না।
'নিঃশব্দে এলে তুমি আমারই জীবনে,
গোধূলি হয়ে রবে তুমি আমারই চিরকাল’ *
* যত দূর ( ওয়ারফেজ )
* প্রতিকী ছবি কারিগর তালহা।
নারায়ণগঞ্জ
০৮ জুলাই, ২০২১, বৃহস্পতিবার

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার গাঠনিক মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।